মিথ্যাবাদীর পরিণাম | মিথ্যাবাদীর করুণ পরিণতি

Estimated read time 1 min read

মিথ্যা খুব সহজ একটি গুনাহ। ছোট একটি মিথ্যা ধসিয়ে দিতে পারে সারা জীবনের অর্জন করা সম্মান। সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার পেছনেও থাকে কোনো না কোনো মিথ্যা

মিথ্যা খুব সহজ একটি গুনাহ। ছোট একটি মিথ্যা ধসিয়ে দিতে পারে সারা জীবনের অর্জন করা সম্মান।সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার পেছনেও থাকে কোনো না কোনো মিথ্যা। পারিবারিক কলহ, খুন-খারাবি, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নসহ হাজারো অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জঘন্য পাপ।

তাই রাসুল (সা.) মিথ্যাকে বৃহত্তর গুনাহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। মিথ্যার কুফল, শাস্তির ভয়াবহতা ও ক্ষেত্রবিশেষ মিথ্যা বলার বৈধতা নিয়ে আজকের এই লেখা।

মিথ্যা হেদায়েত থেকে বিচ্যুত করে : একজন মিথ্যাবাদীর কথা ও কাজে থাকে অনেক অমিল। তার আচার-আচরণে সততা ও স্বচ্ছতার অভাব থাকে।

সে মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে। হালাল-হারামের পার্থক্য ভুলে অসৎ পথে পা বাড়ায়। ধীরে ধীরে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ২৮)

আত্মিক প্রশান্তি দূর করে : মিথ্যা মানুষের অন্তরকে সংকুচিত করে ও সর্বদা চিন্তিত রাখে।  রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয় তা পরিত্যাগ করো। যে বিষয়ে সন্দেহ নেই তা গ্রহণ করো। কেননা সত্য হচ্ছে প্রশান্তি আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহ। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৮)

রিজিক ও বরকতে ঘাটতি সৃষ্টি করে : মিথ্যা সাময়িক সুবিধা ও লাভজনক মনে হলেও এর অভ্যন্তরীণ ক্ষতি অনেক বেশি।

ব্যবসায়ীরা সাধারণত ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, এতে বাহ্যত পণ্যের কাটতি বাড়লেও ব্যাবসায়িক মুনাফার বরকত কমে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম করা থেকে বিরত থেকো। কেননা এর কারণে (সাময়িক) পণ্য বেশি বিক্রি হলেও বরকত কমে যায়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬০)

মিথ্যাবাদীর মর্মান্তিক শাস্তি: সামুরাহ বিন জুনদুব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একদিন (ফজর নামাজ শেষে) আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ আজ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, কিন্তু আমি দেখেছি যে দুজন ব্যক্তি আমার কাছে এলো। অতঃপর তারা আমাকে পবিত্র ভূমির (শাম বা বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে নিয়ে গেল। হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া হাতে দাঁড়িয়ে। দাঁড়ানো ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আঁকড়াবিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পেছনের দিক পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। অতঃপর অপর চোয়ালটিও আগের মতো বিদীর্ণ করল। ততক্ষণে প্রথম চোয়ালটা জোড়া লেগে যাচ্ছিল। আঁকড়াধারী ব্যক্তি পুনরায় সেরূপ করছিল।

…অতঃপর তারা আমাকে ব্যাখ্যা বলে দিল যে আপনি যে ব্যক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী; মিথ্যা কথা বলে বেড়াত, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর-দূরান্তে পৌঁছে যেত। ফলে তার সঙ্গে কিয়ামত পর্যন্ত (কবরে) এরূপ আচরণ করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৬)

যেসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যায় : শরিয়তে মিথ্যা বলা সর্বসম্মতভাবে হারাম হলেও বিশেষ কিছু অবস্থা ও সময়ে মিথ্যা বলার অবকাশ রয়েছে। কোনো সৎ উদ্দেশ্যে অন্যের ক্ষতি ছাড়া এমন কোনো বৈধ বিষয়, যা মিথ্যা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়, তাহলে সেখানে কৌশলে মিথ্যা বলা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেয় সে মিথ্যাবাদী নয়। সে ভালো কথা বলে এবং উত্তম কথাই আদান-প্রদান করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৯২)

অন্যত্র রাসুল (সা.) তিনটি ক্ষেত্রে চতুরতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। (১) যুদ্ধে কৌশল অবলম্বনের ব্যাপারে (২) লোকের বিবাদ মিটিয়ে সন্ধি স্থাপনে (৩) স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক (প্রেমময়) কথোপকথনে। (মুসলিম, হাদিস : ২৬০৫)

আল্লাহ আমাদের মিথ্যার ধ্বংসাত্মক পরিণাম থেকে রক্ষা করুন।

মিথ্যাবাদীর করুণ পরিণতি

ইদানীং মিথ্যা বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ এক জায়গায় অবস্থান করে অন্য স্থানের কথা বলে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র মিথ্যার আশ্রয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়। অথচ মিথ্যা ও মিথ্যাবাদীর শেষ পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

মিথ্যা বলা কবিরা গোনাহ : মিথ্যা কথা বলা জঘন্য অপরাধ। চিহ্নিত মিথ্যাবাদী ঘৃণিত। আল্লাহতায়ালা মিথ্যা কথা পরিহার করার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা মূর্তি পূজার অপবিত্রতা ও মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাক।’ (সুরা হজ : ৩০)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্ববৃহৎ কবিরা গোনাহ চারটি- আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করা, কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (বোখারি : ৬৪০৫, মুসলিম : ১৬২)।

মিথ্যা সমস্ত পাপের মূল : মিথ্যা কথাকে সকল পাপের মূল বলা হয়। কারণ, একটি পাপকে আড়াল করতে আরো একটি মিথ্যার সূত্রপাত হয়। মিথ্যা কথায় অভ্যস্ত ব্যক্তিরা কপালপোড়া। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা মোমিন : ২৮)। মিথ্যা কথা মানুষের হৃদয়কে সংকুচিত ও সর্বদা চিন্তিত রাখে। চোখে-মুখে অপরাধপ্রবণতার ছাপ পাওয়া যায়। হাসান ইবনে আলী (রা.) বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা পরিত্যাগ করো। আর যে বিষয়ে সন্দেহ নেই, তা গ্রহণ করো। কেন না, সত্য হচ্ছে প্রশান্তি আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহ।’ (তিরমিজি : ২৫১৮)।

মিথ্যাবাদীর শেষ পরিণাম : মিথ্যাবাদী সাময়িক মুক্তি পেলেও তার শেষ পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কেন না, তার ওপর অভিশাপ নেমে আসে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।’ (সুরা আলে ইমরান : ৬১)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস ও বিফলতা সে ব্যক্তির জন্য, যে লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য রয়েছে ধ্বংস, তার জন্য রয়েছে অমঙ্গল।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৯০, তিরমিজি : ২৩১৫)। মিথ্যার অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য যাচাই-বাছাই করে তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। কোনো ঘটনার বিকৃত উপস্থাপন বা বাস্তবতা অস্বীকার করাই মিথ্যাবাদীর মূল পরিচয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়।’ (মুসলিম : ৫)।

azadservice https://www.azadservice.com

WhatsApp : wa.me/8801933307999
Email: [email protected]
Call : +8801933307999
Youtube : https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours