চোগলখোর জাদুকর ও শয়তানের চেয়েও ভয়ঙ্কর | চোগলখুরি ও এর পরিণাম কী?

Estimated read time 1 min read

অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে বা নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবি সুযোগ-সুবিধা লাভে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে যে মানুষ একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ায়; সে হচ্ছে চোগলখোর।

ফেতনা-ফ্যাসাদ ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টির লক্ষে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ানোই হচ্ছে চোগলখোরি। ইসলামে চোগলখোরিকে গোনাহের কাজ এবং হারাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চোগলখুরীর কারণে মানুষের মাঝে ফেতনা সৃষ্টি হয়।পরস্পরের ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পারস্পরিক দুশমনি বৃদ্ধি পায়। হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এ কারণেই চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং প্রিয়নবি।

হজরত রাসূলে করিম সা. সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘বলো তো সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক কে? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূল বললেন, সবচেয়ে মন্দ ও নিকৃষ্ট ব্যক্তি হলো চোগলখোর। কারণ, সে সবার সামনে তার পক্ষে কথা বলে, আবার পেছনে গিয়ে তার বদনাম করে’। তিরমিজি।

চোগলখোর জাদুকর ও শয়তানের চেয়েও অধিক ভয়ঙ্কর। জাদুকর এক সপ্তাহে যা করতে পারে, চোগলখোর এক মিনিটে তা করতে পারে। শয়তান তার প্রতিটি কাজ ধোঁকা ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে করে। আর চোগলখোর এ ঘৃণিত কাজটি সামনাসামনি করে।

হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার কাছে অন্যের মন্দ নিয়ে আলোচনা করবে, সে অন্যের কাছে গিয়ে অবশ্যই তোমার বদনাম করবে। তাই যারা বদনাম করে বেড়ায় তাদের কথা কখনো বিশ্বাস করবে না। ’ – হাসান বসরি।

হজরত কাব ইবনে আহবার রা: বলেন, হজরত মুসা আ:-এর যুগে একবার প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। হজরত মুসা আ: তিনবার জাতিকে নিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, কিন্তু দোয়া কবুল হলো না। তখন তিনি আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আমি আমার দলের সবাইকে নিয়ে আপনার দরবারে তিনবার দোয়া করলাম, কিন্তু আপনি তা কবুল করলেন না কেন?

চোগলখোরের শাস্তি

অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে বা নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে যে মানুষ একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ায়, সে হচ্ছে চোগলখোর।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস। ’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (জাহান্নামের একটি স্তর)। আর কিসে তোমাকে জানাবে হুতামা কি? আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন।যা হৃদপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় তা তাদের আবদ্ধ করে রাখবে। প্রলম্বিত স্তম্ভসমূহে। ’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে চোগলখুরি করে বেড়ানো থেকে সাবধান করেছেন। কিন্তু এ চোগলখুরি কী? এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা ও করণীয় কী?

চোগলখুরি কী?
পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ ও অশান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এক জনের কথা অন্য জনের কাছে লাগানেই চোগলখুরি। তবে হাদিসে পাকে সংক্ষেপে চোগলখুরির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাহলো-
হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওহে! আমি কি তোমাদের জানাবো চোগলখুরি কী? চোগলখুরি হচ্ছে-
‘মানুষের মাঝে কথা চালাচালি।’ (মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদিসটি জিজ্ঞাসা ও প্রশ্ন দিয়ে শুরু করেছেন। যাতে মানুষ মনোযোগের সঙ্গে বিষয়টি গ্রহণ করে এবং চোগলখুরি করা থেকে বিরত থাকতে সতর্কতা অবলম্বন করে। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

হাদিসে পাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- ‘চোগলখুরি কী?
এরপর তিনি নিজেই এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন-
চোগলখুরি হলো- মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিভেদ ছড়াতে কারো ব্যাপারে কুৎসা রটানো। কেননা এ ধরণের কাজ করেই জমিনে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি ও মানুষের ক্ষতি করা হয়। ভালোবাসার সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানো হয়। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করানো হয় এবং হিংসা-বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়। যা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান।

চোগলখুরি করার কারণ কী?
ব্যক্তিভেদে চোগলখুরির বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ সময় মানুষের এসব কথা চালাচালির কারণ হলো- অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে বা নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে দেওয়া।
আর এসব কথা চালাচারির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে ফেতনা-ফাসাদ এবং অশান্তি সৃষ্টি করা। ইসলাম এটিকে চোগলখুরি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

চোগলখুরির বিধান ও পরিণাম
ইসলামে চোগলখুরি হারাম ও মারাত্মক অপরাধ। এটি হক্কুল ইবাদ নষ্টের শামিল। যে ব্যক্তি চোগলখুরি করবে; তাকে অবশ্যই ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে; যার ব্যাপারে সে চোগলখুরি বা কথা চালাচালি করেছে। চোগলখুরির পরিণাম খুবই ভয়াবহ। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মদিনার একটি খেজুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে তিনি দুই ব্যক্তির আহাজারি শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ (ব্যক্তি) দু’জনকে বড় কোনো কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না; অবশ্য এগুলো কবিরা গোনাহ। তাদের একজন পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না; আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াতো।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

বর্তমান সময়ে চোগরখুরির ভয়াবহ অভিশাপে পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীতে অশান্তি ও কলহ বিরাজ করছে। কর্মস্থলে কিংবা অফিসে কর্মী-দায়িত্বশীলদের মাঝে বিরূপ মনোভাবও তৈরি হচ্ছে এ চোগলখুরির কারণে।

চোগলখুরি কি নিন্দনীয় কাজ?
হ্যাঁ, চোগলখুরি মারাত্মক খুবই নিন্দীয় কাজ। তাই কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা চোগলখুরির বিষয়টি তুলে ধরে তা থেকে বিরত থাকার মানুষকে এভাবে নসিহত করেন-
‘আর অনুসরণ কর না তার; যে কথায় কথায় শপথ করে; যে লাঞ্ছিত। পেছনে নিন্দাকারী; যে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা ক্বালাম : আয়াত ১০-১১)

হাদিসের বর্ণনায়ও এরা নিকৃষ্ট। পরকালে সবচেয়ে খারাপ লোকদের সঙ্গে তারা ওঠবে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পাবে- যে ছিল দু’মুখো; যে একজনের কাছে এক কথা আরেকজনের কাছে ভিন্ন কথা নিয়ে হাজির হতো।’ (মুসলিম)


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, চোগলখুরি করা থেকে বিরত থাকা। চোগলখুরির মতো হারাম এবং কবিরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকা। চোগলখুরির অপরাধে জড়িয়ে জান্নাত থেকে বঞ্চিত না হওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চোগলখুরির মতো ভয়াবহ খারাপ অভ্যাস থেকে সবাইকে হেফাজত করুন। চোগলখুরিমুক্ত জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Chat On WhatsApp

Please Contact with us for more details.
Our Services

Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : [email protected]
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/

Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/

Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd

Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours