কতটুকু খাবেন ? ইসলাম যা বলে | খাদ্য গ্রহণের ইসলামী পদ্ধতি ও পরিমাণ

Estimated read time 1 min read

বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এই যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞান সদর্পে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান জীবনযাত্রা সহজ ও সাবলীল করেছে। কিন্তু নানা কারণে মানুষের মধ্যে রোগব্যাধি ও অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধের উপাদানগুলো দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে।

ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ব্লাড প্রেসার, শ্বাসকষ্ট, অনিদ্রা ইত্যাদি রোগ আধুনিক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস ও অদ্ভুত রোগব্যাধি। এসব রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মানুষ আসলে কী পরিমাণ সুস্থ হচ্ছে বা সুস্থ থাকতে পারছে বা মানুষ কতটা ডাক্তারের ওপর আস্থা রাখতে পারে—সেটি এক অমীমাংসিত অধ্যায়।
এসব রোগ ও রোগীর কূলকিনারা করতে না পেরে বর্তমানে এ কথার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে যে কম আহার করুন, বেশিদিন বাঁচুন। আর মানুষকে বারবার এ কথা বলা হচ্ছে যে বেশি খেলে বহু রোগ সৃষ্টি হয়। প্রফেসর রিচার বার্ড এই মর্মে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন, বেশি খেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে—
১. মস্তিষ্কের ব্যাধি, ২. চক্ষুরোগ, ৩. জিব ও গলার রোগ, ৪. বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি, ৫. হূদেরাগ, ৬. যকৃত্ ও পিত্তের রোগ, ৭. ডায়াবেটিস, ৮. উচ্চ রক্তচাপ, ৯. মস্তিষ্কের শিরা ফেটে যাওয়া, ১০. দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা, ১১. অর্ধাঙ্গ রোগ, ১২. মনস্তাত্ত্বিক রোগ, ১৩. দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া।

(‘সান’ উইকলি, সুইডেন)
গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে এই তালিকা প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর তালিকা, যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত ও হাদিসের প্রতি লক্ষ করুন। তাঁর খাদ্যবিধি পাঠ করুন। তিনি বলেছেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৪৯)

পেটের এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে বলার কারণ হলো, পানির মধ্যেও বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে—

পানির উপকারিতা নিম্নরূপ
শরীরে পানির অভাব পূরণ করা, রক্তের তরলতা বজায় রাখা, শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় দূষিত জিনিস নির্গত করতে সাহায্য করা, খাদ্যদ্রব্য হজম করতে সাহায্য করা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, শরীরের অম্ল-ক্ষারের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখা, হরমোন তৈরি করতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করা।

একজন ঈমানদার শুধু নামাজ-রোজায়ই তাঁর জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখেন না; তাঁর আহার-বিহার, নিদ্রা-জাগরণ—সব কিছুই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ মোতাবেক পরিচালিত হতে হবে।

মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রহ.) নাফে (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইবনে ওমর (রা.) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না, যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকিনকে ডেকে আনা হতো। একবার আমি তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে এলাম। লোকটি খুব বেশি পরিমাণে আহার করল। তিনি বলেন, নাফে! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে না। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন এক পেটে খায়। আর কাফির সাত পেটে খায়। (মুসলিম, হাদিস : ২০৬০, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫২২০)

বর্তমানে মিক্সড ফুড, পাঁচমিশালি সবজির প্রতি জোর দেওয়া হয়। বিশেষভাবে সকালের নাশতায় পাঁচমিশালি সবজি রাখার তাগিদ দেওয়া হয়। এ ধরনের খাবারের পুষ্টিগুণই শুধু বেশি নয়, বরং স্বাদেও অসাধারণ। এ বিষয়ে একটি হাদিস স্মরণীয়। সালামাহ (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দিল। অবশেষে আমাদের কিছু সওয়ারির বাহন জবাই করার কথা ইচ্ছা করেছিলাম। তখন নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশে আমরা আমাদের খাদ্যদ্রব্য একত্র করলাম। আমরা একটি চামড়া বিছালাম এবং তাতে লোকদের খাদ্যদ্রব্য জমা করা হলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সেটির প্রশস্ততা অনুমান করার জন্য দাঁড়ালাম এবং আমি আন্দাজ করলাম, সেটি একটি ছাগল বসার স্থানের সমান। আর আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দ শ জন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সবাই তৃপ্তির সঙ্গে খেলাম। তারপর আমাদের নিজ নিজ খাদ্য রাখার থলে পূর্ণ করে নিলাম…।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৪৩৬৯, ইফা)

এই হাদিসের ভাষ্য মতে, পাঁচমিশালি অল্প খাবার বহু মানুষের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থেকে তাঁর ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।

খাদ্য গ্রহণের ইসলামী পদ্ধতি ও পরিমাণ

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত দয়াপরবশ। খুঁটিনাটি ছোট-বড় সব বিষয়ে তিনি আমাদের গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। ওমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি ছোটবেলায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছোটাছুটি করত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, হে বৎস, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে আহার করো এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহণ করতাম। (অর্থাৎ নিজের সামনে থেকে আহার গ্রহণ করতাম)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৭৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের খাবার গ্রহণের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছেন।

তাতে আমাদের পার্থিব এবং পরকালীন কল্যাণ আছে। নিম্নে আমরা খাবার গ্রহণের শিষ্টাচার নিয়ে আলোচনা করব।
আহার-পূর্ব শিষ্টাচার

এক. খাবারের আগে হাত ধোয়া। এর দ্বারা হাতে লেগে থাকা ময়লা ইত্যাদি দূর হয়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, খাওয়াদাওয়ার আগে ও পরে অজু করার মধ্যেই বরকত আছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৪৬)
দুই. মাটিতে দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) দস্তরখানে বসে খাবার খেতেন। আর এভাবে খাবারের মাঝে আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ পায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মতো উঁচু স্থান)-এর ওপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি।

আর তাঁর জন্য কখনো পাতলা রুটি তৈরি করা হয়নি। (কাতাদা থেকে বর্ণনাকারী) ইউনুস বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তাঁরা কিসের ওপর আহার করতেন? তিনি বললেন, দস্তরখানের ওপর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪১৫)
তিন. খাবার গ্রহণকারী শুধু রসনাবিলাস করার জন্যই খাবে না; বরং খাবারের সময় এই নিয়ত করবে যে এর মাধ্যমে সে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করবে। এ জন্য উদর পূর্ণ করে খানা না খাওয়া। উদর পূর্ণ করে আহার করার মধ্যে স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা তৈরি হয়, যা বর্তমান চিকিৎসকগণ অকপটে স্বীকার করছেন। আমাদের বিশ্বনবী (সা.) কত আগে এ ব্যাপারে আমাদের বলে গেছেন। মিকদাম ইবনে মাদিকারিব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মানুষ পেট হতে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮০)

এ জন্য ক্ষুধার্ত হওয়ার আগে খাবার না খাওয়া এবং পরিতৃপ্ত হওয়ার আগেই খাবার থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া। যে ব্যক্তি তার জীবন এমন অভ্যাসে পরিণত করবে, তার কখনোই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না, ইনশাআল্লাহ।

খাবারের মধ্যে পালনীয় শিষ্টাচার

আল্লাহর নামে শুরু করা এবং আহার শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া। ছোট ছোট লোকমা দিয়ে খাবার খাওয়া। ভালোভাবে চিবিয়ে খানা খাওয়া। খাবারে কোনো ধরনের দোষ-ত্রুটি না ধরা। হেলান দিয়ে না খাওয়া। নিজের সামনে থেকে খানা খাওয়া। যদি খাবার বিভিন্ন ধরনের হয় তাহলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া জরুরি নয়। খাবারের লোকমা পড়ে গেলে তা উঠিয়ে নেওয়া। গরম খাবারে ফুঁ না দেওয়া। একই প্লেটে খেজুর (বা বিচিজাতীয় অন্য ফল) এবং তার বিচি একত্রে না রাখা। খেজুরের বিচি অন্য হাতে রাখা। (বুখারি, তিরমিজ, ইবনে মাজাহ)

নবী (সা.) খেজুর খেয়ে বিচিগুলো তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলের পেটের ওপর রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭২৯)

একই পাত্রে খেজুর এবং তার বিচি রাখতে নিষেধ করেছেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খাবার ও তার উচ্ছিষ্ট একসঙ্গে না রাখা। তেমনি মুখ থেকে খেজুরের বিচি বের করে হাতের তালুর পরিবর্তে হাতের পিঠে রাখা, যাতে মুখের থুতু আঙুলে না লাগে এবং সে থুতু আবার খাবারে না লাগে। এর মাঝে প্রিয় নবী (সা.)-এর উত্তম রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

যৌথ খানা খাওয়ার ক্ষেত্রে আরো কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা। যদি খাবারের মজলিসে সম্মানিত ব্যক্তি থাকে, তাহলে তার আগে খানা শুরু না করা। খাবারের মধ্যে একদম চুপচাপ না থাকা বরং স্বাভাবিক কথাবার্তা বলা। কারো দিকে খাবারের সময় না তাকানো। এতে সে লজ্জিত হতে পারে।

মেহমান মেজবানের কাছে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের চাহিদা প্রকাশ করা। তবে এ ক্ষেত্রে যদি মেহমানের জানা থাকে যে মেজবানের জন্য বিশেষ খাবার কষ্টসাধ্য হবে না এবং বললে সে আরো খুশি হবে সে ক্ষেত্রে চাহিদা প্রকাশ করতে সমস্যা নেই।

যদি কোথাও কিছু মানুষ খাবার খাচ্ছে এমনটা জানা থাকে তাহলে এমন অবস্থায় তাদের কাছে না যাওয়া। আর যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে যায় আর তারা খাবার খেতে আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে। যদি তারা লজ্জায় পড়ে খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এ কথা বুঝতে পারে তাহলে সেখানে খেতে না বসা। আর যদি বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে খাবার খেতে পছন্দ করবে, তখন বসতে সমস্যা নেই। (মুুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদিন : ৯৪)

খাবারের পর পালনীয় শিষ্টাচার

আঙুল চেটে খাওয়া। পাত্র পরিষ্কার করে খাওয়া। কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন আঙুলে খাবার খেতেন এবং খাবার শেষ করে আঙুলগুলো চেটে খেতেন। (সহিহ মুুসলিম, হাদিস : ৫১৯৩)

খাবার শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। কারণ যে বান্দা খাবার খেয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে, তার প্রতি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। খাবার শেষে হাতের তেল ও চর্বি ভালোভাবে পরিষ্কার করা।

Chat On WhatsApp

Please Contact with us for more details.
Our Services

Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : [email protected]
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/

Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/

Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd

Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours