প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে কোরআনের আহ্বান
কোরআনের বর্ণনায় স্থান পেয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ও বৈচিত্র্য। কোনো ব্যক্তি যদি ঈমানের সঙ্গে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ও বিস্ময়গুলো উপলব্ধি করতে পারেন, তবে তা তাঁর ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ সুনিপুণ
আল্লাহ তাঁর অতুলনীয় সৃষ্টিকুশলতায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তাই আল্লাহর সৃষ্টি ভারসাম্যপূর্ণ ও সুনিপুণ।পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা আল্লাহরই সৃষ্টি-নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৮৮)
আল্লাহ নিখুঁতভাবে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে তিনি কোনো খুঁত রাখেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি আবার দৃষ্টি ফেরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। ’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ৩-৪)
সৌন্দর্য অবলোকনের আহ্বান
নিম্নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের কোরআনের কয়েকটি আহ্বান তুলে ধরা হলো—
১. দেখো সুশোভিত আকাশ : মহান আল্লাহ বিস্ময় ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মহাকাশ দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তারা কি তাদের ঊর্ধ্বস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং তাকে সুশোভিত করেছি এবং তাতে কোনো ফাটলও নেই?’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৬)
২. দেখো প্রীতিকর ভূ-মণ্ডল : পরের আয়াতেই আল্লাহ ভূ-মণ্ডলকে প্রীতিকর আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে উদ্গত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ। ’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৭)
৩. দেখো গ্রহ-নক্ষত্রের সৌন্দর্য : আল্লাহ গ্রহ-নক্ষত্রের সৌন্দর্যের প্রতি মানবজাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ‘আমি আকাশ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং তা সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৬)
৪. আছে মনোরম উদ্যান : কোরআনে বৃক্ষ-তরুলতা ও উদ্যানকে মনোরম বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, অতঃপর আমি তা দ্বারা মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬০)
৫. উপভোগ কোরো গোধূলিলগ্নের সৌন্দর্য : আল্লাহ গোধূলিলগ্নের সৌন্দর্য তুলে ধরে বলেছেন, ‘এবং তোমরা যখন গোধূলিলগ্নে তাদেরকে চারণভূমি থেকে ঘরে নিয়ে আসো এবং সকালে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ করো। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬)
৬. লক্ষ করো ফলমূলের বৈচিত্র্য : বিচিত্র ফলমূল আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। মুমিন যা দেখে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন; এবং আমি তা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উদ্গত করি। ’
(সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)
৭. বিচিত্র পাহাড় কেন দেখো না? : আল্লাহ পৃথিবীতে যে বর্ণিল পাহাড় সৃষ্টি করেছেন তা দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘(তুমি কি দেখো না) পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের পথ—সাদা, লাল ও নিকষ কালো। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)
৮. প্রাণিজগৎ সম্পর্কে উদাস থেকো না : আল্লাহ প্রাণিজগতের বিস্ময়কর জীবনধারার প্রতি মুমিনকে দৃষ্টিপাতের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে কি তারা দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কিভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?’ (সুরা : গাশিয়া, আয়াত : ১৭)
সবচেয়ে সুন্দর মানুষ
আল্লাহর সৃষ্টিজগতে সবচেয়ে সুন্দর হলো মানুষ। মানুষের সৌন্দর্য শুধু তার রং বা আকার-আকৃতির ওপর নির্ভর করে না, বরং সে তার সৌন্দর্য পুরো অবয়বে ধারণ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন—তোমাদের আকৃতি করেছেন সুশোভন, এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে। ’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ৩)
মুমিন শুধু দেখার জন্য দেখে না
মুমিন আল্লাহর মহাবিশ্বের বিপুল সৌন্দর্য অবলোকন করে তার ঈমান বৃদ্ধি করে। সে মহান আল্লাহর মুরাকাবা করে এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে ও বলে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি এটা অনর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)
পবিত্র কোরআনের আলোকে প্রাকৃতিক-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দিক নির্দেশনা
মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৃক্ষ রাজি যে কত বড় নিয়ামত, পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে তা প্রমাণিত।আল্লাহ তায়ালা প্রাকৃতিক পরিবেশকে মানুষের জন্য সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন।
পবিত্র কোরআনে পৃথিবীর মানুষকে প্রাকৃতিক-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দিক নির্দেশনা দিয়ে ঘোষনা করেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান। তখন তারা আনন্দিত হয়’। (সুরাঃ রূম, আয়াতঃ ৪৮)।
কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে সৃষ্টি করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ। জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনে আমাদেরকে বেশী করে বনায়ন করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ পাক কোরআনে ঘোষণা করেন-ইরশাদ হচ্ছে- “যিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ হতে (শক্তি) আগুন উৎপাদন করে দিয়েছেন, সে মতে তোমরা তা হতে (নিজেদের) আগুন জ্বালিয়ে নিতে পার”। (সুরা রাসান, আয়াত-৮০)
আরো ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা যে অগ্নি প্রজ্বলিত কর তা লক্ষ করে দেখছো কি? তোমরাই কি অগ্নি উৎপাদন বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি? আমি একে করেছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত,৭১/৭৩)।
কোরআনে মানুষের জন্য আল্লাহ পাকের অসংখ্য নিয়ামত প্রসংগে ইরশাদ হচ্ছে-“মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে (ভালভাবে) বিদারিত করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য,আংগুর, শাক-সবজি, যায়তুন, খেজুর, বহুবৃক্ষ, বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদির খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর ভোগের জন্য। (সুরা আবাসা, আয়াত: ২৪-৩২)।
কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্রময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে এর বিচিত্র প্রকার বর্ণ, গন্ধ, ও সৌন্দর্য দেখে মানুষ পুলকিত ও অভিভূত হয়। যেন সব কিছুর উন্নতি, অগ্রগতি ও সক্রিয়তা দেখে মানুষ আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তা (পানি) দিয়ে জন্মান শস্য, জাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন’ (সুরাঃ নাহল, আয়াতঃ ১১ )।
বনের গাছপালা থেকে শুধু কাঠ রাবার, ওষুধ বা ফল-মূলই সংগ্রহ করা হয় না, এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি দ্রব্য এবং তেলও পাওয়া যায়। বৃক্ষের পরিশুদ্ধ তেল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত প্রদ্বীপের সাথে আল্লাহ পাক তাঁর নুরের উপমা দিয়েছেন। মানুষ চেষ্টা-গবেষণা করলে বৃক্ষ থেকেও উৎকৃষ্ট ধরণের তেল আহরণ করতে পারে। এই উপমা নি:সন্দেহে সেই তথ্যের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। পবিত্র কুরআন ইরশাদ হচ্ছে “এবং সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে,এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন”(সুরা মুমিনুল, আয়াত: ২০১)।
রাসুল (সা.) বৃক্ষ রোপণকে সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন, মানুষ, পাখি বা পশু তাদের আহার্য গ্রহণ করে তখন তা তার (রোপণকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয় (বুখারী-মুসলিম )।
বন ও বণ্য পশু-পাখি আল্লাহ পাকের দান ও প্রকৃতির শোভাবর্ধক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) এগুলোর সংরক্ষণের উপরও বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি মক্কা মোর্কারমা ও মদীনা মনোয়ারার একটি বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছিলেন। ঐসব এলাকায় গাছপালা কাটা এবং সেখানে বন্য পশু-পাখি শিকার করা আজও নিষিদ্ধ।
মুসলিম বিজয়ীরা যে দেশে গিয়েছেন সে দেশকে গাছপালা দ্বারা সবুজ করে তোলার চেষ্টা করেছেন। প্রধানত: কোরআন ও হাদীস শরীফ থেকেই তাঁরা এ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। মুসলিম ইতিহাসে এর যথেষ্ট নজীর রয়েছে। কৃষির উন্নয়ন ও সংরক্ষণের প্রতি মুসলিম খলিফাগণ সব সময় সজাগ ও সচেষ্ট ছিলেন।
একদা এক ব্যক্তি হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট অভিযোগ করেন যে,তার (সিরিয়ায়) একটি শস্যক্ষেত্র ছিল মুসলিম সৈন্যরা যাওয়ার সময় সেটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। হযরত ওমর (রাঃ) অভিযোগ শুনে ঐ ব্যক্তিকে তার ক্ষতিপূরণস্বরূপ বায়তুল মাল থেকে দশ হাজার দিরহাম দান করেন (কিতাবুল খেয়াজ)।খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ যাপিত জীবনের সব কিছুই গাছকে ঘিরে ও গাছকে নিয়ে।
মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৃক্ষ রাজি যে কত বড় নিয়ামত, পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে তা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে “তারা কি লক্ষ করেনা, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা আহার গ্রহণ করে’। সূরাঃ সেজদা, আয়াত, ২৭)।
হাদীসে এসেছে ‘যে ব্যক্তি কোন বৃক্ষরোপন করে, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাকে এই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান দান করবেন। (মুসনাদে আহমদ)।
Chat On WhatsApp
Please Contact with us for more details.
Our Services
Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : [email protected]
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/
Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/
Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd
Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices
+ There are no comments
Add yours