যেসব কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে | কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা

Estimated read time 1 min read

যেসব কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কবিরা গুনাহের পূর্ণ সংখ্যার বর্ণনা একসঙ্গে উল্লেখ নেই। তবে কোরআন ও হাদিসে যেসব গুনাহ কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ওলামায়ে কেরামের সংখ্যা ৬০টি বলে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ তার সংখ্যা এর চেয়ে অধিক বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে সবগুলো থেকেই বেঁচে থাকা জরুরি।কারও দ্বারা কবিরা গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে খাঁটি মনে আল্লাহর দরবারে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে হবে।

এক নজরে কবিরা গুনাহগুলো
১. আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করা
২. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা
৩. পিতামাতার অবাধ্য হওয়া ও তাদের কষ্ট দেওয়া
৪. কাউকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা
৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
৬. জিনা-ব্যভিচার করা
৭. ওজনে কম দেওয়া
৮. দারিদ্র্যের আশঙ্কায় সন্তান হত্যা করা
৯. কোনো সতী-সাধ্বী নির্দোষ মহিলার ওপর জিনার অপবাদ দেওয়া
১০. সুদ খাওয়া ও সুদ দেওয়া
১১. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
১২. জাদু, টোনা, বাণ মারা
১৩. আমানতের খেয়ানত করা
১৪. ওয়াদার বরখেলাপ করা
১৫. মিথ্যা বলা
১৬. কোরআন শরিফ শিক্ষা করে তা অবহেলাবশত নিয়মিত তিলাওয়াত না করে একেবারেই ভুলে যাওয়া
১৭. আল্লাহতায়ালার কোনো ফরজ ইবাদত, যেমন নামাজ রোজা হজ জাকাত ইত্যাদি বিনা কারণে ছেড়ে দেওয়া
১৮. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা
১৯. কোনো মুসলমানকে কাফির, বেইমান, আল্লাহর নাফরমান, আল্লাহর দুশমন ইত্যাদি বলে গালি দেওয়া
২০. চুরি করা
২১. গিবত করা ও শোনা
২২. বিনা কারণে খাদ্যশস্যের অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে দেওয়া
২৩. কোনো বস্তুর দাম সাব্যস্ত হওয়ার পরও জোরপূর্বক তার মূল্য কম দেওয়া
২৪. সরাব ও মাদকদ্রব্য সেবন করা
২৫. জুয়া খেলা
২৬. গায়রে মাহরাম নারী পুরুষের নির্জনে অবস্থান করা
২৭. আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের না শুকরি করা
২৮. দুর্বলের ওপর সবলের জুলুম অত্যাচার করা
২৯. দয়াময় আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হওয়া
৩০. কারও প্রতি অহেতুক মন্দ ধারণা পোষণ করা
৩১. অপরের দোষ অন্বেষণ করা
৩২. অনুমতি ব্যতীত কারও ঘরে প্রবেশ করা
৩৩. বিনা ওজরে জুমার নামাজ তরক করা
৩৪. মিথ্যা কসম খাওয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে কসম খাওয়া
৩৫. কাফের, অমুসলিমদের রীতিনীতি ও প্রথাকে পছন্দ করা
৩৬. অশ্লীল নৃত্য-গীতি বা গানবাজনা উপভোগ করা
৩৭. সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ন্যায় ও সত্যের পথে আহ্বান না করা এবং অন্যায়, অসত্যকে প্রতিরোধের চেষ্টা না করা
৩৮. কোনো মুসলমানের ওপর জুলুম করা ও তাকে অপমান করা
৩৯. কোনো পশুর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া
৪০. শূকরের মাংস ভক্ষণ করা 
৪১. কোনো হারাম দ্রব্য ভক্ষণ করা
৪২. আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্য কারও নামে জবেহকৃত পশুপাখির গোশত ভক্ষণ করা
৪৩. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া
৪৪. জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎ বাণীকে বিশ্বাস করা
৪৫. গর্ব ও অহংকার করা
৪৬. ঋতুমতী অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা
৪৭. জেনেশুনে সত্য ন্যায়ের উল্টো ফয়সালা দেওয়া বা বিচার করা
৪৮. কোনো জালিম ও অত্যাচারীর প্রশংসা ও গুণগান করা
৪৯. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা
৫০. ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ আদায় করে নেওয়া
৫১. মুসলমান মুসলমানে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া
৫২. নবীজির প্রিয় সাহাবিদের মন্দ বলা ও গালি দেওয়া
৫৩. ঘুষ খাওয়া ও দেওয়া
৫৪. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে দেওয়া
৫৫. বৈধ কারণ ছাড়াই স্ত্রীর পক্ষে স্বামী সহবাসের অসম্মত হওয়া
৫৬. স্ত্রীর সঙ্গে জিহার করা অর্থাৎ আপন মা-বোনের সঙ্গে শারীরিক তুলনা করা
৫৭. আল্লাহর শাস্তি থেকে সম্পূর্ণ নির্ভয় থাকা
৫৮. কোনো প্রাণীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা
৫৯. কোনো আলেম ও হাফেজকারিদের অসম্মান, অপমান ও অবজ্ঞা করে বেইজ্জতি করা
৬০. বেপরোয়াভাবে বারবার গুনাহে লিপ্ত হওয়া
(ফতোওয়ায়ে আলমগিরি, আশ আতুললুমআত, ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম পৃষ্ঠা নম্বর ১০৬) 

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ১০টি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন
১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
২. কখনো পিতামাতার অবাধ্য হবে না, যদিও তারা তোমাকে স্ত্রী-পুত্র ধন-সম্পদ পরিত্যাগ করতে বলেন
৩. ইচ্ছা করে কখনো ফরজ নামাজ তরক করবে না, কেননা তা করলে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হিফাজতের দায়িত্ব উঠে যায়
৪. কখনো সরাব পান করবে না, কেননা তা হচ্ছে সব অশ্লীলতার উৎস
৫. সাবধান! সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে
৬. সাবধান! জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করবে না, যদিও সবাই ধ্বংস হয়ে যায়
৭. কোনো এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে মহামারি দেখা দিলে, সে স্থান ত্যাগ করবে না
৮. তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী পিতামাতার জন্য ব্যয় করবে
৯. পরিবারের লোকদের আদব-কায়দা শিক্ষা দেবে, দীন শিক্ষার ক্ষেত্রে শাসন করতে কখনো দ্বিধাবোধ করবে না
১০. নিজ পরিবারের লোকদের আল্লাহতায়ালার ভয় প্রদর্শন করবে।

(মুসনাদে আহমদ ও মিশকাত শরিফ)

আল্লাহতায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা

গুনাহ মাফের অন্যতম উপায় হলো কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। কাবীরা বা বড় গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে বান্দার অন্যান্য ছোট ছোট গুনাহগুলো আল্লাহ তা‘আলা মাফ করে দিবেন এবং সম্মানীত স্থানে অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

মহান আল্লাহ বলেন :

﴿إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا﴾

‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কবীরা গুনাহগুলো বা বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের ছোট পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।’’[1]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

﴿الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ﴾

‘‘যারা ছোটখাট দোষ-ত্রুটি ছাড়া বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে, নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমার ব্যাপারে উদার, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।’’[2] উপরি-উল্লিখিত আয়াত দু’টির প্রথমটির দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, কাবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলে অর্থাৎ কাবীরা গুনাহ না করলে আল্লাহ সগীরা গুনাহকারীকে এমনিতেই মাফ করে জান্নাত দান করবেন। আর দ্বিতীয় আয়াতটিও প্রথম আয়াতের শিক্ষার অনুকূলে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। মোটকথা সকল ধরনের কাবীরা গুনাহ থেকে দূরে থাকা সগীরা গুনাহ মাফের অন্যতম উপায়।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours