ইসলামের দৃষ্টিতে ইন্টারনেট ব্যবহারে করণীয় | ইন্টারনেটে ইসলাম প্রচারের অবারিত সুযোগ

Estimated read time 1 min read

ইসলামের দৃষ্টিতে ইন্টারনেট ব্যবহারে করণীয়

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। আমাদের কাজের দক্ষতা, শিক্ষা, যোগাযোগ ও বিনোদনের উপায়গুলোকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। যেহেতু ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম, তাই জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া নতুন এই অংশেও ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে, কোরআন-হাদিসে তো ইন্টারনেট সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই, তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহারে তার বিধি-বিধান কিভাবে অনুসরণ করা হবে! এর উত্তর হলো ইন্টারনেট মূলত আমাদের দৈনন্দিনের মৌলিক কিছু কাজে প্রযুক্তির ছোঁয়া যোগ করেছে।

কিন্তু কাজগুলো হাজার বছর থেকেই মানুষ করে আসছে, ইন্টারনেট শুধু তার কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করেছে, গতি এনেছে, সশরীরে না বের হয়ে ঘরে বসেই অনেক কাজ সহজ করেছে। তাই মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করলে ইসলামের বিধি-বিধান বের করা সম্ভব ও সহজ। নিম্নে ইন্টারনেটের কিছু ব্যবহার ও বিধান তুলে ধরা হলো—
তথ্য ও জ্ঞান প্রাপ্তি : ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বিষয়ে দ্রুত তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে পারি। অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া, গবেষণাপত্র, ব্লগ ও ফোরামের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি।

জ্ঞানার্জন ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। পবিত্র কোরআন-হাদিসে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদিস রয়েছে। কিন্তু জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ত পরিশুদ্ধ থাকতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা এই উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করো না যে এর মাধ্যমে আলেমদের সঙ্গে গর্ব করবে বা মূর্খদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হবে। কিংবা মজলিসের অধিকর্তা হবে। যে এমন করবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭৭)

ইন্টারনেট যেহেতু বিশাল তথ্যভাণ্ডার, তাই সেখানে বহু ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। কিছু উপকারে আসবে, আবার কিছু ঈমান-আকিদায় বিভ্রান্তির বিষও প্রবেশ করাতে পারে। তাই ধর্মীয় বিষয়ে ইন্টারনেট থেকে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

অবশ্যই বিজ্ঞ আলেমদের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় বিষয়গুলোর বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন ও বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো বর্জন করতে হবে। কোনো তথ্য পেলেই তা যাচাই-বাছাই করে নেওয়া মুমিনের দায়িত্ব, বিশেষ করে যদি ধর্মীয় বিষয় হয়, তাহলে তা অবশ্যই যাচাই করতে হবে। তথ্যটি কে দিয়েছে, তার মতাদর্শ ও তাকওয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছাড়া ইন্টারনেট থেকে নতুন কিছু পেলেই তা নিয়ে মাতামাতি করা উচিত নয়।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, এই ইলমকে ধারণ করবে প্রত্যেক উত্তর-প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণি। তারা একে মুক্ত রাখবে সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার থেকে এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে। (শরহু মুশকিলিল আছার, হাদিস : ৩৮৮৪)

সহিহ মুসলিমের ভূমিকায় বিখ্যাত তাবেঈ হজরত ইবনে সিরিন (রহ.)-এর উক্তি রয়েছে, যেখানে তিনি বলেন, এই ইলম (কোরআন-সুন্নাহর ইলম) হচ্ছে দ্বিন। সুতরাং দেখে নাও, কার কাছ থেকে তোমরা তোমাদের দ্বিন গ্রহণ করছ। (মুসলিম শরিফ) 

তাই ইন্টারনেট থেকে ধর্মীয় বিষয়ে কোনো তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে হলে অবশ্যই কোনো বিজ্ঞ ও মুত্তাকি আলেমের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে, কোনো নতুন বিষয় পেলে সে বিষয়ে বিজ্ঞদের থেকে যাচাই করে নিতে হবে।

যোগাযোগ : ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারি। ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপস এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে আমরা বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারি। অনেকে এর অপব্যবহার করে বিভিন্ন হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে যায়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগে জিনার গুনাহের পথ খুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)

যার দুটিই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্ভব। তাই মুমিনের উচিত ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ধরনের পাপ থেকে সতর্ক থাকা। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে আরো বহু অপরাধ সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো থেকে বিরত থাকা।

বিনোদন : ইন্টারনেট আমাদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন উপায় প্রদান করে। আমরা অনলাইনে মুভি, টিভি শো, মিউজিক, গেমস এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কনটেন্ট উপভোগ করতে পারি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো ইন্টারনেটের অসুস্থ বিনোদনই বেশির ভাগ মানুষকে টানে। যেগুলো পাপে উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল করে। এর আসক্তি মানুষের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও ধর্মীয় জীবনে প্রভাব ফেলে। পবিত্র কোরআনে এসব অনর্থক কাজের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)

অনেক তাফসিরবিদের মতে, এখানে অসার বাক্য বলতে হারাম গান, বাদ্য ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিনোদন গ্রহণের ক্ষেত্রে হারাম বিনোদনের ব্যাপারে সতর্ক থাকা মুমিনের দায়িত্ব।

বাণিজ্য ও অর্থনীতি : ইন্টারনেট আমাদের অনলাইনে কেনাকাটা, ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারি। অনেকে এগুলোর আড়ালে প্রতারণার জাল পাতে। নিম্নমানের পণ্য কিংবা পণ্য না দিয়ে সরল মানুষদের সম্পদ হাতিয়ে নেয়, যা হারাম। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, প্রতারক ও ধোঁকাবাজদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)

অনেকে আবার ইন্টারনেটে ব্যবসার নামে জুয়ার প্রচলন ঘটায়, উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের অল্প পুঁজিতে বেশি রুজির প্রলোভন দেখিয়ে হারাম জুয়ায় লিপ্ত করে। অথচ এটাও ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।

সামাজিক যোগাযোগ : সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের মতামত, ছবি, ভিডিও শেয়ার করতে পারি এবং বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। এটা দ্বিন প্রচারেও সহায়ক হয়। কিন্তু এর অপব্যবহারের মাধ্যমে অনেকে আবার বিপথেও চলে যায়। অনেকে আবার এসব প্ল্যাটফরম থেকে সহজে উপার্জনের আশায় হারাম পন্থা অবলম্বন করে। এমনকি অশ্লীলতা পর্যন্ত ছড়ায়। অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এটা পছন্দ করে যে মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

অতএব, এসব প্ল্যাটফরম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মুমিনকে সতর্ক থাকতে হবে।

খবর ও আপডেট : ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সর্বশেষ খবর, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, স্পোর্টস আপডেট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারি। অনেকে আবার এই খবরগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই পেতে পছন্দ করি। অথচ সেখানকার খবরগুলো অনেক ক্ষেত্রে গুজবও হয়। কিন্তু আমরা না জেনেই সে গুজব ছড়ানোর কাজে অংশ গ্রহণ করে ফেলি। এতে নিজেদের ও সমাজের অনেক ক্ষতি করে ফেলি, বিশেষ করে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়—এমন কোনো তথ্য পেলে তা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সংস্থা থেকে নিশ্চিত না হয়ে প্রচার করা উচিত নয়। এ কারণেই মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন তাদের নিকট নিরাপত্তার কিংবা ভয়ের কোনো সংবাদ আসে তখন তারা তা রটিয়ে দেয়। যদি তারা তা রাসুলের কিংবা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে থেকে তথ্যানুসন্ধানীরা প্রকৃত তথ্য জেনে নিত। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর দয়া ও করুণা না থাকত তবে তোমাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করত। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৩)

এই আয়াতে ইন্টারনেটের খবর গ্রহণের ব্যাপারে মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। কারণ মানুষ ইন্টারনেটেই এমন হাওয়ার খবর বেশি পায়, আবার সেখানেই এসব খবর খুব রসালো করে রটায়। যার ফলে অনেক সময় বহু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। মুমিনের উচিত ইন্টারনেট থেকে খবর গ্রহণ ও শেয়ার করার আগে এই আয়াতের কথা বারবার স্মরণ করা।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের ফিতনা ও গুনাহের কাজ থেকে বিতর থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইন্টারনেটে ইসলাম প্রচারের অবারিত সুযোগ

যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে ইন্টারনেট। আধুনিক লোকজন ইন্টারনেট ব্যবহারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা শত শত মিলিয়নে পৌঁছে গেছে। ইন্টারনেট দূরের জিনিসকে অতি কাছে নিয়ে এসেছে।

যুগের চাহিদা অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহর উচিত এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম প্রচারে উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।

অনেক অমুসলিম যুবক-যুবতির নাম শুনি, যারা এটাকে তাদের ধর্ম প্রচারের মাধ্যম বানিয়েছে। তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুলেছে। বিশ্বব্যাপী বক্তৃতা, লেকচার, অনুষ্ঠান প্রচার করছে। ফলে অনেকে তাদের ধর্ম অনুসরণ করছে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এই ছোট জানালা দিয়ে কত ভালো বিষয়াদি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে তার হিসাব নেই। অন্যদিকে অনেকে ইন্টারনেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনর্থক সময় নষ্ট করছে। এর মাধ্যমে কিভাবে ভালো কাজ করবে তা জানে না।
আমি এই মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম প্রচার নিয়ে আলোকপাত করব, ইনশাআল্লাহ।

আমি মনে করি, যোগাযোগ মাধ্যম দিন দিন উন্নত হচ্ছে। নবী করিম (সা.)-এর সামনে অনেক প্রচারমাধ্যম উন্মোচিত ছিল। তিনি সেসব মাধ্যমকে সরাসরি ইসলাম প্রচারে ব্যবহার করেছেন। ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে এমন স্থানে যেতে তৎপর ছিলেন, যেখানে গেলে অনেক মানুষকে একসঙ্গে আল্লাহর দিকে ডাকা যায়।

অর্থাৎ তিনি জনসাধারণের একত্র হওয়ার স্থান হাট-বাজারে যেতেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমার আগে যত রাসুল পাঠিয়েছি, তারা খাবার আহার করত (যেহেতু তারা মানুষ ছিল) এবং বাজারে যেত।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২০)
আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার আওয়াজকে এত অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, যার সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। কেননা প্রতিমুহূর্তে শত শত মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটে থাকে। তাহলে সারা দিনে কী পরিমাণ থাকে চিন্তার বিষয়। এটা বিশাল সংখ্যা।

যে কারণে মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী

১. এটি একটি সহজ মাধ্যম।

২. এই মাধ্যমে কোনো নিরাপত্তাজনিত জটিলতা নেই। আপনি ইন্টারনেটে গিয়ে লিখতে পারেন, ‘প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুবহানাল্লাহ বলবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বৃক্ষ রোপণ করবেন।’ এই হাদিস লেখার পর কেউ প্রশ্ন করবে না যে আপনার পরিচয়পত্র কোথায়, কে আপনাকে (হাদিস বর্ণনার) অনুমতি দিয়েছে ইত্যাদি। তা ছাড়া এমন অনেক বোন আছেন, যাঁরা ধর্মীয় প্রগ্রামে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু তাঁর পক্ষে মসজিদে মানুষের সামনে বক্তৃতা প্রদান সম্ভব নয়। তিনি জুমার খুতবাও দিতে পারেন না।

অধিকন্তু পরিবার, সন্তান ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়াও সম্ভব হয় না। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

আবার অনেকে লজ্জা বা যোগ্যতার অভাবে সেমিনারে বক্তৃতার প্রগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ইন্টারনেট এসব জটিলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

ইন্টারনেট ধারালো অস্ত্রের মতো

ইন্টারনেট ধারালো অস্ত্রের মতো। সেটা এমন একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে আপনি আজ যা বপন করবেন, আগামীকাল তার ফসল আহরণ করবেন। অনেকেই ইন্টারনেট খারাপ কাজে ব্যবহার করে। কিছুদিন আগে এক জরিপে পড়লাম, ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা ছবির ৮৪ শতাংশ অশ্লীলতাপূর্ণ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ছবি প্রকাশ করা হয়। গাড়ি, সমুদ্র, প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি আপলোড করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভয়ংকর পরিসংখ্যান।

যেভাবে ইন্টারনেটে ধর্ম প্রচার করতে পারি

ইন্টারনেটে ইংরেজি ভাষায় লিখিত অনেক মেসেজ, প্রবন্ধ আছে, যার বর্ণনাভঙ্গি খুব সুন্দর। সেটা আপনি যেকোনো ব্যক্তিকে পাঠাতে পারবেন। বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে জানতে পারবেন, কে মুসলিম আর কে মুসলিম নয়। অমুসলিমদের জন্য অনেক মুনতাদা (সাহিত্য আসর বা ব্লগ) রয়েছে। আপনি ইসলাম সম্পর্কে ইংরেজিতে সুন্দরভাবে বিস্তারিত লিখে এদের কাছে পাঠাতে পারেন।

ইসলামের সেবায় অবদান রাখুন

হে ভাই, ইসলামের সেবায় নিজের অবদান রেখে যান। নিজেকে উম্মতে মুহাম্মদির সদস্য মনে করুন। জাতির জন্য কিছু উপস্থাপন করুন। জাতির এই করুণ অবস্থা চলতে থাকলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

আমি তিনটি উদ্যোগের কথা জানি, যা মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করতে পারে। সেসব উদ্যোগের বিষয়ে অনেকেই জানেন। তবু গাফিলদের স্মরণ করিয়ে দিতে উল্লেখ করছি।

১. গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ ডাউনলোড-আপলোড করা।

২. ভালো লেখকদের উৎসাহ প্রদান করা। কেননা উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে অনেক ইতিবাচক ফল বেরিয়ে আসে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি প্রশংসা-উৎসাহে উজ্জীবিত হওয়া। এ জন্য আপনি দেখবেন যে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে ইবাদতে উৎসাহব্যঞ্জক কথা বেশি এসেছে।

৩. বিভিন্ন মন্তব্য (কমেন্ট) করে তাদের উৎসাহ প্রদান করা; যেমন—মাশাআল্লাহ! আপনার লেখাশৈলী চমৎকার। আপনার লেখার যোগ্যতা আছে। কেন আপনি লেখা থেকে দূরে থাকেন? কেন নিজেকে এমন কাজে মগ্ন করছেন না, যা দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার ও সমগ্র মুসলিম জাতির উপকার করবে।…

৪. এক নির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়ে বিক্ষিপ্ত প্রবন্ধকে একত্র করা।

৫. মানুষের মধ্যে প্রচলিত বিদআত গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করা।

৬. বিভিন্ন ব্লগে অংশগ্রহণ ও তাতে প্রবন্ধ প্রদান।

৭. মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করা।

৮. তাৎক্ষণিক সামাজিক প্রয়োজন ও ত্বরিত সেবামূলক কর্মকাণ্ডে মানুষকে দিকনির্দেশনা প্রদান।

৯. বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় কল্যাণমূলক কাজে অংশ নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ।

১০. মুসলমানদের নতুন তথ্য দিয়ে উপকৃত করা। উদাহরণস্বরূপ নির্দিষ্ট সাইটে এই তথ্য লেখা যে ২০০৬ সালে জার্মানিতে চার হাজার ব্যক্তি মুসলমান হয়েছে। আবার এই সুসংবাদও লিখতে পারেন যে আপনি কি জানেন, ইউরোপে প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন মুসলিম হচ্ছে। বেলজিয়ামের সরকারি পরিসংখ্যান আপনি জানেন কি? বেলজিয়ামের সরকারি জরিপ বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা হবে প্রথম।

১১. ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাদিসের খিদমত করতে পারেন। ২০০৮-এর এক জরিপে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পড়েছি। সেই জরিপের আলোকে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যান একানে দেওয়া হলো : এশিয়ায় ৫৭৮ মিলিয়ন। ইউরোপে ৩৮৫ মিলিয়ন। উত্তর আমেরিকায় ২৮৪ মিলিয়ন। লাতিন আমেরিকায় ১৫১ মিলিয়ন। আফ্রিকায় ১৫১ মিলিয়ন। অস্ট্রেলিয়ায় ২১ মিলিয়ন। চীনে ২৭৬ মিলিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যে ৪১ মিলিয়ন। এখন দেখি ওয়েবে ভাষার পরিসংখ্যান। ইংরেজি ভাষায় ৪৮০ মিলিয়ন। যেসব ওয়েবসাইট ইসলামের সেবা করে, তার মধ্যে চীনা ভাষায় ইসলামী ওয়েবসাইটের সংখ্যা সবচেয়ে কম। তারপর স্প্যানিশ ভাষা, তারপর জার্মান ও ফরাসি ভাষার অবস্থান।

১২. হাদিসের তথ্য-উপাত্ত, হজ পরিচিতির সেবা প্রদান।

১৩. হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও হজবিষয়ক মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া। এসব কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করার বাস্তব নমুনা আমাদের সামনে আছে।

১৪. গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির পর্যাপ্ত সঞ্চয়ভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারি।

১৫. নেটের মাধ্যমে ইসলামিক লিংক, পণ্যসামগ্রী বাজারজাতকরণ ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইসলামের সেবা করা সম্ভব। নবীজির সিরাতবিষয়ক ওয়েব বা বিভিন্ন কিরাতে তাফসিরসহ পবিত্র কোরআন পড়া ও ডাউনলোডের সুব্যবস্থাসমৃদ্ধ ওয়েব প্রস্তুত ও লিংক প্রচার করতে পারি।

১৬. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অমুসলিমদের দাওয়াতে আমরা বেশি মনোযোগী হতে পারি। কেননা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’

১৭. নেট সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ সংস্থা হতে পারে।

১৮. যোগ্যরা তাঁদের যে যে যোগ্যতা আছে, তা প্রকাশ করতে পারেন।

১৯. অনেক যুবকের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। আপনি নেটের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

২০. ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ এমন লোকদের কাছে বিভিন্ন প্রবন্ধ ভাষান্তর করে পাঠাতে পারেন।

২১. অনেক অনৈসলামিক ওয়েবে প্রবেশ করেও মানুষকে উপদেশ দেওয়া যায়।

২২. অনেক নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট আছে, যার সাহায্যে অমুসলিম ও অনারবদেরও দাওয়াত দেওয়া সম্ভব; যেমন—ফেসবুক। এখানে বিভিন্ন জাতি, ভাষাভাষী ও ধর্মাবলম্বী লোক আছেন। তবে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এর অনেক কিছুই মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর। আপনি কিছু পোস্ট করলে অনেকেই তা পড়তে পারবে। অন্তত চোখ বুলাতে পারবে। সে এটা গ্রহণ করুক বা না করুন। আপনার দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দেখছেন।

২৩. আরব দেশগুলোতে অমুসলিম অনারব আরবি শিক্ষার্থীদের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব। এই ভাষার মর্যাদা সম্পর্কে বলা যাবে। অনেক ওয়েবসাইট আছে পবিত্র কোরআন অনুবাদের। প্রতিটি আয়াত অনুবাদসহ পড়া হয়। আল্লাহ চাহেন তো পরবর্তী সময়ে এটা তাদের ইসলাম গ্রহণ করার কারণ হবে।

২৪. কোরআন বিতরণ করে প্রচার চালাতে পারেন।

২৫. ওয়েব কর্তৃপক্ষ ও ডেভেলপারদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে জানতে হবে, কিভাবে ইসলাম প্রচারে বেশি বেশি ভূমিকা রাখা যায়। পরিশেষে আল্লাহ তাআলার কাছে আমার ও আপনাদের জন্য তাওফিক প্রার্থনা করছি।

সৌদি আরবের বিখ্যাত বক্তা ড. আরেফির বক্তৃতা থেকে

অনুবাদ করেছেন মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

Chat On WhatsApp

Please Contact with us for more details.
Our Services

Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : [email protected]
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/

Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/

Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd

Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours