চাইলেই কি কাউকে কাফের বলা যাবে ? | কাউকে কাফির বলার নীতি ও পরিণতি

Estimated read time 1 min read

চাইলেই কি কাউকে কাফের বলা যাবে?

বর্তমান সময়ে মানুষ একে অপরকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কাফের, মুনাফেক কিংবা অনেক খারাপ বিশেষণে বিশেষায়িত করে থাকে। শরিয়ত কোনো মুসলমানকে অপর অবিশ্বাসী বা কাফের, ধর্মের প্রতি কটাক্ষকারী অথবা বিভ্রান্ত ব্যক্তি, ইত্যাদি দোষারোপ করতে নিষিদ্ধ করেছে। এটি হচ্ছে সাধারণ নীতি।  

ইমাম আবু হানিফার মতে, কোনো কথায় যদি ৯৯ শতাংশই অবিশ্বাসের বোঝায় এবং মাত্র ১ শতাংশ বিশ্বাস (ঈমান) অবশিষ্ট থাকে তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না।

আর কোনো মুসলিমকে কাফের বলে অভিহিত করা কবিরা গুনাহ। এমনটি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ কথা ও কাজে ঈমানবিধ্বংসী বক্তব্য না থাকলে তাকে তা বলা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যাকে কাফের বলা হবে সে সত্যিকারে কাফের না হলে যে কাফের বলল তার দিকেই সেটা ফিরে আসবে (তিরমিজি ২৬৩৭; বুখারি ৬১০৩)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার (মুসলিম) ভাইকে কাফের বলাটা তাকে হত্যা করার মতো অপরাধ (মিশকাত ৩৪১০)।  

অর্থাৎ দুনিয়ায় কোনো মানুষকেই নিজেদের মতের সঙ্গে মিল না থাকলে ইসলাম বিদ্বেষী বা অবিশ্বাসী কাফের, মুনাফেক ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করা যাবে না। যতক্ষণ না ওই ব্যক্তির মাঝে প্রকাশ্য কুফর প্রকাশ না হয়। বরং অবিশ্বাসী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মসজিদে যাতায়াতকারী, নামাজ-রোজাসহ ইবাদত-বন্দেগি করা ব্যক্তিকে মুমিন-মুসলমান হিসেবে ভালোবাসাও ঈমানের একান্ত দাবি।  

কাউকে কাফির বলার নীতি ও পরিণতি

কোনো মুসলমানকে কাফির বলে সম্বোধন করা জায়েজ নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন যেন অন্যজনকে ফাসিক বলে গালি না দেয় এবং একজন যেন অন্যজনকে কাফির বলে অপবাদ না দেয়। কেননা, অপরজন যদি তা না হয়, তবে সে অপবাদ তার নিজের ওপর আপতিত হবে।’ (বুখারি : ৬০৪৫)

ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘সে অন্য ব্যক্তিকে যা বলেছে, যদি তা না হয় তবে সে নিজেই উল্লিখিত অপবাদের উপযুক্ত হবে।আর যদি ওই ব্যক্তি বাস্তবেই তা হয়ে থাকে তাহলে সে সত্য বলার কারণে তার ওপর কোনো কিছু আরোপিত হবে না। (ফাতহুল বারি: ১০/৪৬৬)

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘কেউ তার ভাইকে ‘কাফির’ বলে সম্বোধন করলে উভয়ের একজনের ওপর তা ফিরে আসবে। যাকে ‘কাফির’ বলা হয়েছে সে কাফির হলে তো হলোই, নতুবা কথাটি বক্তার ওপর ফিরে আসবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৪)

ইমাম গাজালি (রহ.)-এর মতে, যে তার অন্য ভাইকে কাফির বলে সে নিজেই কাফির।পরবর্তী উলামায়ে কেরাম বলেছেন, যদি গালি হিসেবে কাফির বলে তাহলে সে কাফির হবে না। আর যদি এটাই তার আকিদা হয়, তাহলে কাফির হয়ে যাবে।’ (ফয়জুল বারি, শরহে বুখারি : ৬/১৫২)

হাদিসে আরো এসেছে, ‘কোনো মুমিনকে কুফরের অপবাদ দেওয়া, তাকে হত্যা করার মতোই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১০৫)

ইমাম আবুল মাআলি (রহ.) বলেন, ‘কোনো কাফিরকে মুসলিম বলে চালিয়ে দেওয়া এবং কোনো মুসলমানকে দ্বিন থেকে বের করে দেওয়া উভয়টাই জঘন্য।’ (ইকফারুল মুলহিদিন : ২৭)

একই কথা বলেছেন মুফতি শফি (রহ.) (জাওয়াহেরুল ফিকহ)

কাফির বলার অনুমতি ও সাবধানতা

অমুসলিমরা তো স্পষ্ট কাফির। তাদের কাফির বলতে নিষেধাজ্ঞা নেই; বরং তাদের কুফরকে কুফর মনে না করলে অথবা তাদের কুফরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে ঈমান চলে যাবে।

এ বিষয়ে কাজি ইয়াজ (রহ.) ইজমা বর্ণনা করেছেন, ‘এ ব্যাপারে আলেমরা ঐকমত্য যে যে ব্যক্তি কোনো ইহুদি-খ্রিস্টানকে কাফির বলে না অথবা তাদের কাফির বলা থেকে বিরত থাকে কিংবা তাদের কুফরে সন্দেহ পোষণ করে সেও সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। (আশ শিফা : ২/২৮১)

এ তো গেল অমুসলিমদের ব্যাপার। মুসলমানের পক্ষ থেকেও যদি এমন কোনো কথা বা কাজ প্রকাশ পায়, যা স্পষ্ট কুফর তাহলে সেও কাফির হয়ে যাবে।যেমন—কেউ যদি শিরক করে, আল্লাহর কোনো বিধান অস্বীকার করে, দ্বিনের কোনো অকাট্য বিষয়কে অপছন্দ করে, ঠাট্টা-মশকরা করে, আল্লাহর মনোনীত ও রাসুল (সা.)-এর আনীত জীবনব্যবস্থার তুলনায় অন্য কোনো জীবনব্যবস্থাকে উত্তম মনে করে তাহলে সে মুরতাদ ও কাফির বলে গণ্য হবে। (শামি, কাজিখান, কিতাবুল ঈমান, নাওয়াকেজুল ইসলাম)

সতর্কতা

কারো থেকে কুফর প্রকাশ পেলে তাকে তাকফির তথা কাফের বলে ঘোষণা দেওয়া সাধারণ মানুষের কাজ নয়। মুফতিয়ানে কেরাম ওই ব্যক্তির সার্বিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে তাকফিরের মূলনীতি সামনে রেখে কাফের ফতোয়া দেবেন।

ফতোয়ায়ে লাজনাতুদ দায়েমা-তে আছে—

‘কাউকে কাফির বলার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হলো, প্রমাণ থাকা, সতর্কতা অবলম্বন করা এবং দলিল স্পষ্ট না হলে দ্রুত তাকফির না করা।’ (ফতোয়া নম্বর : ৪৪৪৬)

শরহে আকিদাতুত তাহাবিতে আছে, ‘তাকফিরের কাজ আঞ্জাম দেবে শুধু যে আলেমদের ইলেমে গভীরতা আছে।’ (ফতোয়ায়ে লাজনাতুদ দায়েমা, পৃষ্ঠা ৯২)

কাউকে তাকফির তথা কাফের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে খারেজিদের মতো বাড়াবাড়ি করা যাবে না। একইভাবে মুরজিয়াদের মতো ছাড়াছাড়ি করে কাফের বা মুরতাদকে মুসলিম আখ্যা দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মূলনীতির অনুসরণ করতে হবে। (শরহে আকিদাতুত তাহাবি, পৃষ্ঠা ৯১)

কুফরের হুকুম আরোপে প্রতিবন্ধকতা

অনেকেই সামান্য বিষয়ে হুট করে অন্যকে কাফির বলে দেয়। এ ক্ষেত্রে ফিকহি উসুল তথা মূলনীতির কোনো তোয়াক্কা করে না। তাদের জেনে রাখা উচিত, কারো থেকে কুফর প্রকাশিত হলেও তার মধ্যে কিছু বিষয় পাওয়া গেলে তাকে কাফির বলা যায় না; বরং শুধু তার কাজটাকে কুফরি বলা হয়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর নির্দিষ্টভাবে কুফরির হুকুম আরোপ করা যায় না। বরং বলা হবে, যে ব্যক্তি এ কাজ করেছে সে কাফির। অথবা বলবে, এই কাজটি কুফর।’ (মাজমুয়ুল ফাতাওয়া)

যেসব বিষয়ের কারণে কাউকে কাফের বলা যায় না—সেগুলোকে পরিভাষায় বলা হয় ‘মাওয়ানেউত তাকফির’ তথা কাফির বলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। এগুলো মোট সাতটি।

১. অজ্ঞতা : জমহুর উলামায়ে কেরাম অজ্ঞতাকে ওজর হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু জরুরতে দ্বিন তথা দ্বিনের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াবলি (যেমন: নামাজ, পর্দা, হজ ইত্যাদির) ক্ষেত্রে এ ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। (ইকফারুল মুলহিদিন : পৃষ্ঠা ৭১)

২. তাবিল তথা ব্যাখ্যা পেশ করা : কেউ যদি তার কুফরির বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পেশ করে অথবা তার কুফরিটি সন্দেহপূর্ণ হয় তাহলে তাকে তাকফির করা যাবে না। তবে জরুরতে দ্বিনের (ইসলামের মৌলিক বিষয়ের) ক্ষেত্রে তাবিল বা ব্যাখ্যা ওজর ধরা হবে না। (ইকফারুল মুলহিদিন, পৃষ্ঠা ৭১)

৩. ইকরাহ তথা কুফরিতে বাধ্যকরণ : জীবননাশের আশঙ্কা থাকা অবস্থায় কাউকে কুফরিতে বাধ্য করার কারণে তার থেকে যে কুফর প্রকাশ পায় তা ওজর হিসেবে গণ্য হবে। (সুরা নাহাল, আয়াত : ১০৬)

৪. ভুল করা : কেউ ভুলবশত মুখে কুফরি উচ্চারণ করে ফেললে তাকে তাকফির (কাফির বলা) করা যাবে না। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫, ইবনে মাজাহ, হাদিস :২০২৩)

৫. অক্ষমতা : নির্জন মরভূমি বা দ্বীপে থাকার কারণে যার কাছে দ্বিনের জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিষয় পৌঁছেনি, তাকে তাকফির করা যাবে না। (কিতাবুল ঈমান)

৬. নতুন ইসলাম গ্রহণ। (তিরমিজি-হাদিস: ২১৮০)

৭. বড় কুফর প্রতিরোধে ছোট কুফর করা। (বুখারি, হাদিস : ৩০৩১)

কুফর ও তাকফিরে বিষয়গুলো খুবই স্পর্শকাতর। ইসলামী দলিল ছাড়া কাউকে কাফির বলা যাবে না। অন্যথায় এ কুফর নিজের দিকেই ফিরে আসবে। সুতরাং এ ব্যাপারে সবার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কাউকে কাফির বলার আগে উক্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া অপরিহার্য।

লেখক : পরিচালক, দারুস সুন্নাহ মডেল মাদরাসা, খিলক্ষেত, ঢাকা

Chat On WhatsApp

Please Contact with us for more details.
Our Services

Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : [email protected]
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/

Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/

Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd

Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours